বিকেলের নাস্তায় বা বর্ষার দিনে গরম গরম চায়ের সাথে কিছু মুচমুচে, সুস্বাদু খাবার খেতে কার না ভালো লাগে! ঠিক তেমনি এক স্বাদে ভরপুর, পুষ্টিকর এবং সহজে তৈরি করা যায় এমন একটি রেসিপি হলো পালং শাকের পাকোড়া। শীতের মৌসুমে বা যখনই বাজারে তাজা পালং শাক পাওয়া যায়, তখন এই রেসিপিটি তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। এটি শুধু স্বাদের দিক থেকেই নয়, স্বাস্থ্যের দিক থেকেও দারুণ উপকারী, কারণ পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং বিভিন্ন ভিটামিন।

এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক মুচমুচে পালং পাকোড়া তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটি।

প্রয়োজনীয় উপকরণ:

উপাদান

পরিমাণ

পালং শাক (পরিষ্কার করে কুচানো)

২ কাপ

বেসন

১ কাপ

চালের গুঁড়ো

২ টেবিল চামচ

পেঁয়াজ (কুচি)

১টি মাঝারি

কাঁচা মরিচ (কুচি)

২টি (রুচি অনুযায়ী কমবেশি করা যাবে)

রসুন বাটা

১ চা চামচ

আদা বাটা

১ চা চামচ

হলুদের গুঁড়ো

আধা চা চামচ

মরিচের গুঁড়ো

১ চা চামচ

ধনিয়া গুঁড়ো

আধা চা চামচ

বিট লবণ বা স্বাদ অনুযায়ী লবণ

পরিমাণমতো

পানি

প্রয়োজনমতো

সাদা তেল / সরিষার তেল

ভাজার জন্য



প্রস্তুত প্রণালী:

১.      শাক প্রস্তুতি: পালং শাক ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এর পরে পানি ঝরিয়ে ছোট ছোট কুচি করে কেটে নিন। কচি পালং শাক ব্যবহার করলে পাকোড়ার স্বাদ আরও ভালো হবে।
২.      মিশ্রণ তৈরি: একটি বড় বাটিতে কুচানো পালং শাক, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি, আদা ও রসুন বাটা একসাথে দিন। এরপর এতে বেসন ও চালের গুঁড়ো যোগ করুন। চালের গুঁড়ো পাকোড়া মচমচে হতে সাহায্য করে।
৩.      মসলা মেশানো: মিশ্রণে হলুদ, মরিচ গুঁড়ো, ধনিয়া গুঁড়ো এবং লবণ দিন। সব উপকরণ একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
৪.      পানি যোগ: খুব ধীরে ধীরে সামান্য করে পানি দিন এবং মিশ্রণটি একটু আঠালো ও ঘন ব্যাটারের মতো করে তৈরি করুন। ব্যাটার বেশি পাতলা হয়ে গেলে পাকোড়া ছড়িয়ে যেতে পারে, তাই ঘনত্ব বজায় রাখুন।
৫.      তেল গরম করা: একটি গভীর কড়াইতে পরিমাণমতো তেল গরম করুন। তেল যেন যথেষ্ট গরম হয়, তবে অতিরিক্ত না হয়—তাহলে পাকোড়ার বাইরের দিক পুড়ে যেতে পারে কিন্তু ভেতর কাঁচা থেকে যাবে।
৬.      পাকোড়া ভাজা: গরম তেলে হাত বা চামচের সাহায্যে অল্প করে ব্যাটার নিয়ে ছেড়ে দিন। মাঝারি আঁচে ভাজতে থাকুন। এক পাশ বাদামী হয়ে এলে উল্টে দিন এবং উভয় পাশ সমানভাবে ভাজুন। পাকোড়া ভাজতে সাধারণত ৫–৬ মিনিট সময় লাগে।
৭.      তেল ঝরিয়ে নেওয়া:ভাজা হয়ে গেলে একটি টিস্যু পেপার বিছানো প্লেটে রাখুন যেন অতিরিক্ত তেল ঝরে যায়।


পরিবেশন পদ্ধতি:
পালং পাকোড়া গরম গরম পরিবেশন করাই সবচেয়ে ভালো। আপনি চাইলে টমেটো সস, ধনেপাতা-টকদই চাটনি বা ঝাল মুড়ি সাথেও খেতে পারেন। চায়ের সাথে এই পাকোড়া একদম দুর্দান্ত লাগে।


অতিরিক্ত টিপস:
·         আপনি চাইলে বেসনের পাশাপাশি একটু কর্নফ্লাওয়ার বা শুকনো নারকেল গুঁড়োও যোগ করতে পারেন, এতে স্বাদ ও মচমচে ভাব বাড়বে।
·         যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে, তারা রসুন বা কাঁচা মরিচের পরিমাণ একটু কমিয়ে নিতে পারেন।
·         স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য খুব অল্প তেলে শ্যালো ফ্রাই করেও এটি তৈরি করা যায়।

পুষ্টিগুণ:
পালং শাক আয়রন, ভিটামিন A, C, K, এবং ক্যালসিয়ামে ভরপুর। এছাড়া এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার, যা হজমের জন্য ভালো। বেসন প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ, তাই পালং পাকোড়া শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিতেও সমৃদ্ধ একটি খাবার।

উপসংহার:
পালং শাকের মতো সাধারণ উপাদান দিয়েও কতটা সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর এবং সহজে তৈরি করা যায় এমন একটি রেসিপি—তা এই মুচমুচে পাকোড়া দেখিয়ে দেয়। এটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে, অতিথি আপ্যায়নে বা নিজের জন্য তৈরি করে নিতে পারেন। সময় কম, উপকরণ সহজলভ্য—তাই আজই তৈরি করে ফেলুন এই অসাধারণ “মুচমুচে পালং পাকোড়া”।
শুভ রন্ধন! 🍽️